খ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) সাবেক ভাইস চ্যান্সেলর (প্রো-ভিসি), দেশের অন্যতম শীর্ষ ভাইরোলজিস্ট অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম।
আজ বুধবার (২৩ ডিসেম্বর) বিকেলে রাজধানীর গার্লস গাইড এসোসিয়েশন অডিটোরিয়ামে সামাজিক সুরক্ষা নিশ্চিতকরণ ও বিশ্ব মানবাধিকার ২০২১ উদযাপন উপলক্ষে জাতীয় এডভোকেসি সম্মেলনে এ কথা বলেন তিনি।
অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম বলেন, ‘সন্তান প্রসবের আগে আক্রান্ত ব্যক্তিরা বিষয়টি আমাদের জানালে আমরা সেই বাচ্চাকে সুস্থ অবস্থায় প্রসব করাতে পারবো, আমাদের চিকিৎসকরা সেই সক্ষমতা অর্জন করেছেন। আমাদের হাতে যে কয়জন আক্রান্ত ব্যক্তির সন্তান প্রসব হয়েছে, তারা সকলেই নেগেটিভ হিসেবে জন্মগ্রহণ করেছে।
দেশে এইচআইভি সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে সকল ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘দেশে কাঁচের সিরিঞ্জ ব্যবহার বন্ধ করে ডিসপোজাল সিরিঞ্জ ব্যবহার করে হচ্ছে। মাদকাসক্তদের মধ্যে সংক্রমণ ঠেকাতে কাজ করা হচ্ছে। এখন সেটাও অনেকটা নিয়ন্ত্রণে। তবে তাদের মধ্যে হেপাটাইটিসে আক্রান্তের হার অধিক।’
এইচআইভি মোকাবেলায় গুরুত্বপূর্ণ অবদানের জন্য অনুষ্ঠানে অধ্যাপক নজরুল ইসলামকে আজীবন সম্মাননা প্রদান করা হয়।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব কাজী জেবুন্নেছা বেগমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান নাছিমা বেগম।
শে করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট অমিক্রনে আরো এক ব্যক্তি আক্রান্ত হয়েছেন। এ নিয়ে এখন পর্যন্ত তিনজনের শরীরে করোনার এই নতুন ভ্যারিয়েন্টের শনাক্তের তথ্য পাওয়া গিয়েছে।
আজ সোমবার (২৭ ডিসেম্বর) জার্মানির গ্লোবাল ইনিশিয়েটিভ অন শেয়ারিং অল ইনফ্লুয়েঞ্জায় (জিআইএসএআইডি) এই তথ্য দিয়েছে।
এর আগে বাংলাদেশের জাতীয় নারী ক্রিকেট দলের দুজনের শরীরে এই ভ্যারিয়েন্টের অস্তিত্ব পাওয়া গিয়েছিল।
সবার অ্যাঞ্জেলিনা জোলি হবার প্রয়োজন নাই, প্রয়োজন স্তন ক্যান্সার নিয়ে সচেতনতা “স্তন ক্যান্সার নিয়ে আতংক নয় ,চিকিৎসার চেয়ে জরুরি সচেতনতা !সারা বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আমাদের দেশেও মহিলাদের মধ্যে স্তন ক্যান্সারে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। মূলত জিনঘটিত কারণে ৩৫–৪০ বছর বয়স পেরনো মহিলাদের মধ্যে স্তন ক্যান্সারের প্রবণতা লক্ষ করা যাচ্ছে !আলোচনাসভা, সচেতনতামূলক প্রচারের মধ্যে দিয়ে অক্টোবর মাসেই আমরা পালন করেছি ‘স্তন ক্যান্সার সচেতনতা’ মাস। চিকিৎসাবিজ্ঞান অনেক এগিয়েছে। তবুও অনেক ক্ষেত্রে আজও সচেতনতার অভাবে স্তন ক্যান্সারকে বশে আনা যাচ্ছে না। তবে সঠিক সময়ে এই রোগ ধরা পড়লে আধুনিক চিকিৎসায় বেশিরভাগ ক্ষেত্রে একে সম্পূর্ণ আয়ত্তের মধ্যে আনা সম্ভব।
স্তনের কিছু কোষ যখন অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যায়, তখনই স্তনে ক্যান্সার দেখা দেয়। মূলত মহিলাদের মধ্যে এর প্রবণতা বেশি দেখা গেলেও পুরুষরাও এতে আক্রান্ত হতে পারেন। তবে মহিলারা এ অসুখের ঝুঁকির মধ্যে যতটা রয়েছেন, পুরুষরা ততটা নন। স্তন ক্যান্সারের রোগীরা সাধারণত বুকে চাকা বা পিন্ডের মতো কিছু অনুভব করেন। তবে স্তনে চাকা বা মাংস পিন্ডের মতো কিছু মানেই ক্যান্সার, এমনটা নয়। অনেক ক্ষেত্রে স্তনবৃন্ত থেকে লালরঙের রস নিঃসরণ বা রক্তক্ষরণ, স্তনের ত্বকে অস্বাভাবিক কোনও পরিবর্তন, স্তনবৃন্ত ভেতরের দিকে ঢুকে যাওয়া ও সেখান থেকে চামড়া উঠতে থাকা ইত্যাদিকে এই রোগের লক্ষণ বলে ধরা হয়। যাঁরা এ ধরনের উপসর্গ উপেক্ষা করেন বা ভয়ে ও লজ্জায় চিকিৎসকের কাছে যান না, তাঁদের ক্ষেত্রে বগলের তলায় চাকা বা স্তনের ওপরের চামড়ায় কোঁচকানো ভাব বা ঘা নিয়ে উপস্থিত হওয়াটা খুব স্বাভাবিক। এক্ষেত্রে বুঝে নিতে হবে যে, রোগটা অনেক দূর এগিয়ে গেছে। তবে এই রোগে কখনই স্তনে ব্যথা অনুভূত হয় না। স্তন ক্যান্সার সাধারণভাবে ৩৫ বা ৪০–ঊর্ধ্ব মহিলাদের সমস্যা হলেও আমাদের দেশে ৩০–এর ঘরের মহিলারাও এতে আক্রান্ত হচ্ছেন। নিঃসন্তান মহিলা বা যাঁরা কোনও কারণে সন্তানকে বুকের দুধ খাওয়াতে পারেননি তাঁদের এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। এ ছাড়া স্তন ক্যান্সারের বংশগত বা জেনেটিক দিকও আছে। পরিবারের কোনও মহিলা এই রোগে আক্রান্ত হলে তাঁর মা বা বোন অথবা মেয়ের (ফার্স্ট ডিগ্রি রিলেটিভ) ক্ষেত্রে এই রোগ হওয়ার ঝুঁকি ২২%–৩৩% বেড়ে যায়। এখন পর্যন্ত ৮টি স্তন ক্যান্সারের জিন আবিষ্কৃত হয়েছে। এদের মধ্যে বিআরসিএ ১ এবং বিআরসিএ ২ উল্লেখযোগ্য। লক্ষণ দেখা দিলে ডায়াগনসিসের জন্য সবচেয়ে ভাল ট্রিপল অ্যাসেসমেন্ট পদ্ধতি। যেখানে প্রথমে একজন স্তন ক্যান্সার সার্জেন রোগীর পরীক্ষা করবেন ও তাঁর পরিবারিক ইতিহাস জানবেন। এরপর রোগীর ম্যামোগ্রাম বা স্তনের আলট্রাসাউন্ড স্ক্যান করা হবে এবং সার্জেন রোগীর লাম্প বা স্তনের ডেলা থেকে এফএনএসি বা কোর বায়োপ্সি করবেন। এখন এফএনএসি–র বদলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই কোর বায়োপ্সি করা হয়। কারণ এফএনএসি–র চেয়ে কোর বায়োপ্সি অনেকটাই উন্নত পদ্ধতি। অল্পবয়সিদের ক্ষেত্রে সাধারণত আলট্রাসাউন্ড স্ক্যান করা হয়। ৩৫ বছর বয়সের বেশি মহিলাদের ক্ষেত্রে রোগ শনাক্তকরণের জন্য ম্যামোগ্রাম করা হয়। স্তন ক্যান্সার ধরা পড়লে প্রথমে কিছু রক্ত পরীক্ষা ছাড়া বুকের এক্স–রে, বোন স্ক্যান এবং লিভারের আলট্রাসোনোগ্রাফি করা উচিত। যদি দেখা যায়, ক্যান্সার এই সমস্ত অঙ্গে ছড়ায়নি তবেই একমাত্র কিউরেটিভ সার্জারি এবং কেমোথেরাপি করে রোগীকে সারিয়ে তোলা সম্ভব। বর্তমানে সম্পূর্ণ স্তন বাদ না দিয়েও স্তন ক্যান্সারের চিকিৎসা সম্ভব। এক্ষেত্রে অপারেশনের পরে রোগীকে রেডিওথেরাপি নিতে হবে। অনেক ক্ষেত্রে প্রাথমিক পর্যায়ে রোগ ধরা পড়লে শুধুমাত্র টিউমারটি বাদ দিয়ে স্তনের বাকি অংশে রেডিওথেরাপি বা রে দিয়ে চিকিৎসা করা হয়। এই সার্জারির সময় বগলের নীচের অংশের গ্ল্যান্ডগুলো সম্পূর্ণভাবে বাদ দেওয়া হয় এবং বায়োপ্সির রিপোর্টের ওপর নির্ভর করে রোগীর কেমোথেরাপির প্রয়োজন আছে কিনা। যদি প্রাথমিক পর্যায়ে রোগ ধরা না পড়ে অনেকটা বেড়ে যাওয়ার পর ধরা পড়ে, তখন নিও–অ্যাডজুভ্যান্ট কেমোথেরাপি দিয়ে সার্জারি করাটাই ভাল। বয়স যেমনই হোক প্রাথমিক অবস্থায় ক্যান্সার নির্ণয় করতে পারলে প্রায় সমস্ত রোগীকেই সারিয়ে তোলা সম্ভব। অপারেশন, কেমোথেরাপি ছাড়াও রয়েছে হরমোন থেরাপি। বেশ কিছু ক্ষেত্রে স্তন ক্যান্সার হরমোন রিসেপ্টর সেন্সেটিভ হয়। এক্ষেত্রে রোগীদের অ্যান্টি–ইস্ট্রোজেন হরমোন জাতীয় কোনও ওষুধ দিলে, তা খুবই কার্যকরী ভূমিকা নেয়। হরমোন ছাড়াও ‘হার টু নিউ’ নামে এক ধরনের রিসেপ্টর রয়েছে। এক্ষেত্রে হারসেপটিন নামে একটি ওষুধ দেওয়া হয়। ওষুধটি ব্যয়বহুল হলেও, স্তন ক্যান্সারের চিকিৎসায় যার সাফল্য খুবই আশানুরূপ। যাঁদের বয়স খুব বেশি সে সব রোগীর সার্জারি বা কেমোথেরাপি না করে, হরমোন থেরাপির মাধ্যমে বেশ কিছুটা সময় রোগটিকে নিয়ন্ত্রণে আনা যায়। আর আছে ইমিউনোথেরাপি। তবে এই ধরনের চিকিৎসা একজন দক্ষ ও অভিজ্ঞ ব্রেস্ট সার্জেনের তত্ত্বাবধানেই করা উচিত। এ কথা অনস্বীকার্য যে, প্রাথমিক অবস্থায় ধরা পড়লে ৮০–৮৫ শতাংশ মহিলাকে আধুনিক চিকিৎসার মাধ্যমে সারিয়ে তোলা সম্ভব। প্রাথমিক অবস্থায় স্তন ক্যান্সার ধরতে প্রত্যেক মহিলাকেই নিজের শরীর নিজেকেই নিয়মিতভাবে পরীক্ষা করে দেখতে হবে। এ ছাড়া যাঁরা ৪০–ঊর্ধ্ব মহিলা, বিশেষ করে যাঁদের পরিবারে ব্রেস্ট ক্যান্সার আক্রান্ত রোগী আছেন, তাঁদের উচিত নিয়মিত ম্যামোগ্রাম করানো। এই পরীক্ষায় এক বিশেষ ধরনের এক্স–রে–র সাহায্যে স্তনে চাকা অনুভব করার অনেক আগেই ক্যান্সার শনাক্ত করা যায়। পারিবারিক ইতিহাস থাকলে ক্যান্সারের জীবাণু আপনার শরীরে বাসা বাঁধছে কিনা সেটা আগে থেকে পরীক্ষা করে নিশ্চিত হওয়াটাই ভাল। মাসে একবার নিজেই নিজের পরীক্ষা করুন। অর্থাৎ সেলফ অ্যাসেসমেন্ট। পিরিয়ডের এক সপ্তাহ পরে, সাধারণভাবে স্নান করার সময় বা জামাকাপড় পরার সময়ে এই পরীক্ষা করতেই পারেন। আয়নার দু’পাশে হাত রেখে দাঁড়ান। দু’দিকের স্তনের মধ্যে কোনও অসামঞ্জস্য আছে কিনা লক্ষ করুন। এবার মাথার ওপর দু’হাত তুলুন। মাথার পাশে রাখুন। দেখুন দু’দিকে কোনও অসামঞ্জস্য নজরে পড়ে কিনা। হাতের চেটো দিয়ে প্রথমে একদিকের ও পরে অন্যদিকের স্তন পরীক্ষা করুন। কোনওরকম চাকা বা ফোলা ভাব আছে কিনা ভাল করে লক্ষ করুন। এবারে দেখুন নিপ্ল বা স্তনবৃন্তে কোনও পরিবর্তন হয়েছে কিনা। পরিবর্তন বলতে একদিকের নিপ্ল ভেতর দিকে ঢুকে গিয়েছে কিনা বা নিপ্লের পাশে কোনও ঘা আছে কিনা। যদি ঘা–এর সন্ধান পান তাহলে অবিলম্বে ব্রেস্ট ক্যান্সার সার্জেনের সঙ্গে যোগাযোগ করবেন। সঠিক সময়ে চিকিৎসা শুরু করলে সুস্থ জীবনে ফেরাটা কঠিন নয়। এই অসুখের চিকিৎসায় সবচেয়ে ভাল মাল্টিডিসিপ্লিনারি টিম। এই টিমের তত্ত্বাবধানে স্তন ক্যান্সার ও এই সংক্রান্ত সবরকম সমস্যার চিকিৎসা করা হয়। অসুখ–বিসুখ নিয়ে কোনওরকম লজ্জা বা তা চেপে না রাখাই ভাল। এতে রোগের বাড়বাড়ন্তটা অনেকটাই বেড়ে যায় এবং তখন তাকে নিয়ন্ত্রণে আনাটা অনেকটাই কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। স্তন ক্যান্সারের মতো অসুখ নিয়ে অযথা ভয় না পেয়ে, উপসর্গ দেখা দিলে দ্রুত রোগ নির্ণয় এবং চিকিৎসা শুরু করুন। স্তন ক্যান্সারের চিকিৎসা পদ্ধতিতে গত দশ বছরে আমূল পরিবর্তন এসেছে। পশ্চিম দুনিয়ায় ব্রেস্ট সার্জারি আলাদা বিষয় বা স্পেশ্যালিটি বলে গণ্য করা হচ্ছে। সেখানে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত চিকিৎসক অথবা নার্সরা শুধুমাত্র ব্রেস্ট সংক্রান্ত সমস্ত চিকিৎসা করা হয় ! আমাদের দেশে এর অত্যাধুনিক চিকিৎসা শুরু হয়েছে সফলভাবে !একমাত্র স্বাস্থ্যসচেতনতার মাধ্যমেই উন্নততর দেশগুলো স্তন ক্যান্সারের মোকাবিলা করতে পেরেছে। সবাইকে অ্যাঞ্জেলিনা জোলি হতে বলছি না যিনি তাঁর দেহে বিআরসিএ ১ জিনের উপস্থিতি জানতে পেরে (স্তন ক্যান্সারের সম্ভাবনা ছিল ৮৭%) সঙ্গে সঙ্গে প্রতিকারের উপায় হিসেবে দুটি স্তনই বাদ দিয়ে দেন। তবে দ্রুত চিকিৎসা করিয়ে ভারতীয় নায়িকা মুমতাজ কিংবা জেন ফন্ডার মতো অসংখ্য সেলিব্রিটি দিব্যি বেঁচে আছেন বিশ্বজুড়ে।নিকাশ কালো রাতের পর ভোরের আলো আসবেই !
ডাঃ কৃষ্ণারুপা মজুমদার
সহযোগী অধ্যাপক
জেনারেল এবং ক্যান্সার সার্জারি বিভাগ
বঙ্গবন্ধু শেখমুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়
চেম্বার ঃ আনোয়ার খান মর্ডান হাসপাতাল
ধানমন্ডি , ০১৭৭৭১৩১৩৯১
ত্বক দেহের একক বৃহত্তম অঙ্গ। এ জন্য দেহের সুস্থতার জন্য সুস্থ ও সুন্দর ত্বক
পারিপার্শ্বিক অবস্থার সঙ্গে দেহের খাপ খাইয়ে স্বাভাবিক অবস্থা রক্ষা করা ত্বকের একটি প্রধান কাজ। এ জন্য ঋতু পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে ত্বকেরও পরিবর্তন হয়ে থাকে। গ্রন্থি নিঃসৃত তেলের মাধ্যমে ত্বকের উজ্জ্বলতা ও মসৃণতা বজায় থাকে। শীতের শুষ্ক আবহাওয়া ত্বকের স্বাভাবিক তেলের আস্তরণ শুষে নেয়। ফলে ত্বক শুষ্ক ও রুক্ষ হতে থাকে। বিশেষ করে একজিমা, সোরিয়াসিস, ইকথায়োসিস এবং অ্যালার্জিজনিত রোগে যারা ভুগে থাকেন তাদের অবস্থার অবনতি হতে থাকে। সুস্থদের এসব রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। এ জন্য শীতে ত্বকের জন্য বিশেষ যত্নের প্রয়োজন।
স্নান
অনেকে শীতে গরম পানিতে গোসল করেন। এতে ত্বক আরও শুষ্ক হয়ে থাকে। কুসুম গরম পানিতে স্বল্প সময়ে গোসল শেষ করুন। গোসলে অপেক্ষাকৃত কম ক্ষারীয় সাবান ব্যাবহার করুন। ত্বকের ধরন অনুযায়ী সাবান নির্বাচনে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে পারেন। একজিমা, সোরিয়াসিস, ইকথাওসিস ইত্যাদি রোগে যারা ভুগে থাকেন, তারা চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী অটামিল বা সি সল্ট বাথ নিতে পারেন।
মসৃনতা
কোনো রোগ না থাকলেও শীতে ত্বক স্বাভাবিক রাখতে অবশ্যই ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করতে হবে। ময়েশ্চারাইজার ত্বকের নিঃসৃত তেল সংরক্ষণে সহায়তা করে এবং ত্বক মসৃণ রাখে। গোসলের পর পরই ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করা ভালো। ক্রিম, লোশন, জেল এমনকি সাবান হিসেবে ময়েশ্চারাইজার বাজারে পাওয়া যায়। এগুলো নির্বাচনে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া যেতে পারে।
পোশাক পরিচ্ছদ
টাইট এবং সিনথেটিক পোশাক ত্বককে আরও শুষ্ক ও রুক্ষ করে এবং অ্যালার্জির কারণ হতে পারে। কাজেই আরামদায়ক এবং প্রাকৃতিক তন্তু দিয়ে তৈরি পোশাক পরিধান করুন। পলিয়েস্টার, লিলেন, নাইলন ইত্যাদি পরিহার করুন।
হিউমিডিফায়ার
ঘরে জলীয় বাষ্পের অনুপাত ঠিক রাখতে হিউমিডিফায়ার ব্যবহার করতে পারেন। এর মাধ্যমে রুমের জলীয় বাষ্প ৪০ থেকে ৬০ শতাংশে রাখুন। বিশেষ করে একজিমা, সোরিয়াসিস, ইকথাওসিস ইত্যাদি রোগে যারা ভুগে থাকেন তাদের জন্য হিউমিডিফায়ার বেশ কার্যকর ভূমিকা রাখে।
মনে রাখবেন, একজিমা, সোরিয়াসিস, ইকথাওসিস ইত্যাদি রোগে যারা ভুগছেন শীতে তাদের ব্যাকটেরিয়া, ফাঙ্গাস, ভাইরাস ও পরজীবী জনিত ত্বকের সংক্রমণের সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
কাজেই শীতে ত্বকের যত্ন নিন। সর্বোপরি—
১. পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা মেনে চলুন
২. খোলামেলা ও আলোকিত পরিবেশে থাকার চেষ্টা করুন
৩. চিন্তা মুক্ত থাকুন এবং
৪. ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখুন
এসব নিয়ম মেনে চললে দেখবেন এই শীতের সময়টা আপনার জন্য অনেক আনন্দ ও উপভোগ্য হয়ে উঠেছে।
মেডিভয়েস রিপোর্ট: করোনায় আক্রান্ত ৭৮ দশমিক ৭৯ শতাংশ মা অপরিণত সন্তান প্রসব করেছেন। করোনায় আক্রান্ত হননি এমন গর্ভবতী নারীর তুলনায় এই ভাইরাসে আক্রান্ত গর্ভবতী নারীদের প্রায় অর্ধেকের মাতৃত্বজনিত বিভিন্ন প্রতিক্রিয়া দেখা গিয়েছে।
মঙ্গলবার ( ১৪ ডিসেম্বর) জাতীয় প্রতিষেধক ও সামাজিক চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান (নিপসম) অডিটোরিয়ামে ‘বাংলাদেশে মহামারিকালে গর্ভধারণকারী নারীদের মাতৃত্ব এবং প্রসূত শিশুর পরিণতির সঙ্গে কোভিড-১৯ রোগের সম্পর্ক’ শীর্ষক গবেষণার ফলাফল প্রকাশ অনুষ্ঠানে এ তথ্য দেওয়া হয়।
ফলাফল উপস্থাপনা করেন জাতীয় প্রতিষেধক ও সামাজিক চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান (নিপসম'র) পরিচালক অধ্যাপক ডা. বায়েজীদ খুরশীদ রিয়াজ।
চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ৮৯০ জন নারীকে নিয়ে পরিচালিত ঢাকার চারটি সরকারি ও একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হওয়া গর্ভবতী নারীদের অতীত রেকর্ড এবং তাদের সঙ্গে ফোনে কথা বলে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে এ ফলাফল প্রকাশ করা হয়েছে।
অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ৫৪ শতাংশের বয় ২৫ থেকে ৩৪ বছর। সাত শতাংশের বয়স ৩৫ থেকে ৪৫ বছর। ৩৯ শতাংশের বয়স ১৫ থেকে ২৪ বছর।
অধ্যাপক ডা. বায়েজীদ খুরশীদ রিয়াজ জানান, এ গবেষণায় দেখা গেছে গর্ভকালীন সময়ে করোনায় যারা আক্রান্ত হয়েছেন তাদের ৫৪ শতাংশের স্বাভাবিকভাবে সন্তান প্রসব হয়েছে। বাকি ৪৬ শতাংশের নানা ধরনের বিরূপ প্রতিক্রিয়া হয়েছে। আর এই বিরূপ প্রতিক্রিয়ার মধ্যে রয়েছে প্রিটার্ম ডেলিভারি অর্থাৎ ৩৭ সপ্তাহের আগে সন্তান প্রসব হয়েছে ৭৮ দশমিক ৭৯ শতাংশ, গর্ভে থাকা অবস্থায় সন্তানের মৃত্যু ১৫ দশমিক ১৫ শতাংশ আর জরায়ুর বাইরে গর্ভধারণ হয়েছে চার দশমিক চার শতাংশের।
গবেষণার ফলাফলে আরও পাওয়া গেছে, করোনায় আক্রান্ত হওয়া গর্ভবতীদের ৮৩ শতাংশের প্রসব সম্পন্ন হয়েছে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে। আর করোনাতে আক্রান্ত হননি তাদের তুলনায় আক্রান্তদের ঝুঁকি ছিল এক দশমিক দুই শতাংশ। নন কোভিড গর্ভবতী নারীদের অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে প্রসব হয়েছে ৬৮ শতাংশের। গবেষণাতে আরও পাওয়া গেছে, করোনায় আক্রান্ত গর্ভবতীদের প্রসবজনিত জটিলতা অন্যদের তুলনায় ছিল এক দশমিক পাঁচ গুণ। সেইসঙ্গে করোনায় আক্রান্ত গর্ভবতীদের শূন্য দশমিক পাঁচ শতাংশের মৃত্যু হয়েছে।
গবেষণার ফলাফলে বলা হয়, আক্রান্ত নারীদের ৯১ দশমিক দুই শতাংশের করোনার লক্ষণ উপসর্গ ছিল, বাকি আট দশমিক চার শতাংশের কোনও লক্ষণ বা উপসর্গ ছিল না।
অধ্যাপক ডা. বায়েজীদ খুরশীদ রিয়াজ আরো জানান, এই গবেষণা দলে তিনি ছিলেন প্রধান গবেষক। তার সঙ্গে ছিলেন প্রতিষ্ঠানের রোগতত্ত্ব বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. ফাহমিদা আক্তার, পাবলিক হেলথ অ্যান্ড হসপিটাল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন বিভাগের ডা. মোহাম্মদ আশরাফুল আলম, কমিউনিটি মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ রাশিদুল আলম, নবজাতক ডা. উম্মুল খায়ের আলম, পাবলিক হেলথ অ্যান্ড হসপিটাল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন বিভাগের ডা. কামরুন্নাহার এবং ডা. আজমেরি শারমিন।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন, স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সিনিয়র সচিব লোকমান হোসেন মিঞা, স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক ( প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবীর, ওজিএসবি-(অবস্ট্রেটিক্যাল অ্যান্ড গাইনোকোলজিক্যাল সোসাইটি অব বাংলাদেশ হাসপাতাল) এর সাবেক দুই সভাপতি অধ্যাপক ডা. রওশন আরা ও অধ্যাপক ডা. সামিনা চৌধুরী।