পান-সুপারি খাওয়ার লাভ-ক্ষতি?


অধ্যাপক আ ব ম ফারুক
পান-সুপারি খাওয়ার লাভ-ক্ষতি?

পান সুপারির ব্যবহার প্রায় চার হাজার বছরের। পৃথিবীর কয়েকটি শহর সুপারির নামে নামকরণ করা হয়েছে। যেমন- ভারতের গুয়াহাটি, মালয়েশিয়ার পেনাং প্রভৃতি। পূর্ব আফ্রিকা, ভারত উপমহাদেশ থেকে শুরু করে তাইওয়ান পর্যন্ত প্রায় ৬০ কোটি লোক পান সুপারি খেয়ে থাকেন। ভারত, মিয়ানমার, ইন্দোনেশিয়ার পর বাংলাদেশ বিশ্বে চতুর্থ সুপারি উৎপাদনকারী দেশ। পান সুপারি খেলে শরীর কিছুটা গরম হয়, কর্মদক্ষতা ও মনের সতর্কতা বৃদ্ধি পায়। যেমন- একজন ড্রাইভার গাড়ি চালানোর সময় ঘুম পেলে গাড়ি থামিয়ে একটি পান খেয়ে নেন, তাতে তার ঘুম চলে যায়।

 

পান সুপারি ও রকমারি জর্দার গুণাগুণ নিয়ে কিছু ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান নানা রকম প্রচারণা করে থাকে। এমনকি কোনো কোনো প্রখ্যাত আলেমও এগুলোর মধ্যে অনেক উপকারিতা খুঁজে পেয়েছেন (বেহেশতি জেওর, নবম খণ্ড)। হিন্দু ধর্মের ও বৌদ্ধ ধর্মের কোনো কোনো শাখার কিছু ধর্মীয় অনুষ্ঠানে পান সুপারির ব্যবহার অপরিহার্য বিবেচনা করা হয়। পান সুপারি সহজলভ্য ও সস্তা। এর ব্যবহারও ব্যাপক। কোনো বৃদ্ধ লোকের দাঁত নড়বড়ে হলে বা না থাকলে পান সুপারিকে হামান দিস্তা দিয়ে গুঁড়ো করে খাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়। তবুও পান তার খাওয়া চাই। আমার এক আত্মীয়া প্রায় প্রতি ঘণ্টায় পান খান।

একদিন হঠাৎ পান ফুরিয়ে গেলে রাত ১১টায় প্রতিবেশিনীর বাসায় গিয়ে হাজির ‘পান ভিক্ষার’ জন্য। তিনি তো রীতিমতো অবাক। কোনো দিন তার এই প্রতিবেশিনী কোনো কিছু চাইতে আসেননি। পানের জন্য এত রাতে হাজির! অর্থাৎ পান সুপারি নির্ভরশীলতা তৈরি করে এবং কয়েক ঘণ্টার মধ্যে না খেলে প্রত্যাহারজনিত সমস্যা (Withdrawl Syndrome) বা নানা রকম শারীরিক সমস্যা সৃষ্টি হয়। আমার এক বন্ধু ঘুম থেকে উঠে পান না খেলে প্রাতক্রিয়া করতে পারেন না। আরেকজন রোগী পান ফুরিয়ে গেলে মাঝ রাতে পানের দোকানদারকে বাধ্য করেন দোকান খুলতে। কয়েকজন রোগীর সাথে আলাপচারিতায় জানা যায়, তারা সিগারেট ছাড়তে সক্ষম হয়েছেন, কিন্তু পানের নেশা ছাড়তে পারেননি।

পান সুপারির উপকারিতা নিয়ে বৈজ্ঞানিক কোনো গবেষণা হয়নি। এর অপকারিতার ওপর অনেক গবেষণা হয়েছে। পানের সাথে যেসব উপাদান ব্যবহার করা হয় তা হচ্ছে সুপারি, চুন, খয়ের, জর্দা, লবঙ্গ প্রভৃতি। এসব উপাদানের বেশির ভাগই স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকারক।

সুপারি : এতে অ্যারেকোলিন (Arecoline), অ্যারেকাইডিন (Arecaidine), গাভাকাইনসহ (Gavacaine) বেশ কিছু ক্ষারজাতীয় পদার্থ রয়েছে, যা রক্তনালীকে সঙ্কুচিত করে। সুপারিতে অ্যাডরেনালিন আছে। ফলে নিয়মিত ও অতিরিক্ত সুপারি ব্যবহার করলে উচ্চ রক্তচাপ, বুক ধড়ফড় করা, ডায়াবেটিস বেড়ে যাওয়া, হাঁপানি বৃদ্ধি পাওয়া এবং হৃদরোগের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। আসলে সুপারি প্রতিটি অঙ্গের ক্ষতি করতে পারে। লিভার ইনজুরি, কিডনি রোগ, বিপিএইচ, ইনফার্টিলিটি, হাইপারলিপিডোমিয়া, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়া, মানসিক রোগ বৃদ্ধি পাওয়া, দাঁতের মাড়ি ক্ষয় ও দাঁত পড়ে যাওয়া ইত্যাদির সাথে সুপারি জড়িত। গর্ভবতী মায়েদের ক্ষেত্রে অকালে সন্তান প্রসব (Preterm birth), শিশুর ওজন ও উচ্চতা কম হতে পারে। সুপারির সাথে মেটাবলিক সিন্ড্রোম ও Obesity বা স্থূলতা জড়িত। সুপারির সাথে ক্যান্সারের সরাসরি সম্পর্ক রয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সুপারিকে কারসিনোজেন (ক্যান্সারের উপাদান) হিসেবে উল্লেখ করেছে। আন্তর্জাতিক ক্যান্সার গবেষণা সংস্থা (IARC) সুপারিকে ১৯৮৫ সাল থেকে ‘কারসিনোজেন’ হিসেবে গণ্য করে আসছে। ২০০৯ সালে ৩০ জন বিজ্ঞানী আন্তর্জাতিক ক্যান্সার গবেষণা সংস্থায় নিশ্চিত করেছেন, সুপারিতে ক্যান্সার জীবাণু রয়েছে। পৃথিবীর যেসব এলাকায় সুপারি ব্যবহার করা হয়, বিশেষ করে ভারতীয় উপমহাদেশে মুখের ও খাদ্যনালীর ক্যান্সার সবচেয়ে বেশি। এ অঞ্চলে এক লাখ লোকের মধ্যে ২০ জনের এবং সব ধরনের ক্যান্সারের মধ্যে শতকরা ৩০ জনের শুধু মুখের ও খাদ্যনালীর ক্যান্সার হয়ে থাকে। আমারই পরিচিত তিনজন আলেম ছিলেন যারা প্রচুর পান-সুপারি খেতেন এবং তারা মুখের ও খাদ্যনালীর ক্যান্সারে মৃত্যুবরণ করেছেন। যুক্তরাষ্ট্রের সিডিসি (CDC) নির্ভরযোগ্য, গবেষণাধর্মী প্রতিষ্ঠান। এ প্রতিষ্ঠানের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে মৃত্যুর প্রধান কারণ হচ্ছে ক্যান্সার।

সিডিসির তথ্য অনুযায়ী, সুপারির সাথে Oral submucous fibrosis, মুখের ক্যান্সার, নেশা (Addiction), প্রজনন সমস্যা প্রভৃতি জড়িত। যুক্তরাষ্ট্রের আরেকটি স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠান এফডিএ (ঋউঅ), সুপারিকে বিষাক্ত গাছের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করেছে এবং সুপারিকে চিবানো বা খাওয়ার জন্য নিরাপদ মনে করে না।

চুন : মানে, ক্যালসিয়াম হাইড্রক্সাইড পান সুপারির সাথে অল্প পরিমাণ ব্যবহার করা হয়। এতে মুখগহ্বরের পিএইচ (Ph) ১২.৫ এর উপরে উঠে যায়, ফলে সুপারির আগে উল্লিখিত ক্ষারজাতীয় পদার্থগুলো জিহ্বার নিচে দিয়ে সরাসরি রক্তে প্রবেশ করে। চুন মুখে কেমিক্যাল বার্ন বা ক্ষত সৃষ্টি করতে পারে। ঘন ঘন পান খাওয়ার সাথে অতিরিক্ত চুন সেবনে হাইপারক্যালসেমিয়া, মেটাবলিক অ্যালকালসিস, মিল্ক অ্যালকালি সিন্ড্রোম, কিডনি ইনজুরি এবং কিডনিতে পাথর হতে পারে।

জর্দা : পান-সুপারি ও চুনের সাথে জর্দার সংযোজন সাম্প্রতিক সময়ের; অ্যামেরিকা মহাদেশ থেকে তামাক আমদানির পর থেকে। জর্দা এই তামাক পাতা থেকে তৈরি করা হয়। তামাকে ২৮টি কার্সিনোজেন (ক্যান্সারের উপাদান) রয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, পৃথিবীর প্রায় তিন ভাগের এক ভাগ মানুষ তামাক সেবন করেন। এর মধ্যে প্রায় ১১ শতাংশ ধোঁয়াযুক্ত তামাক (সিগারেট, বিড়ি প্রভৃতি) সেবন করে থাকে এবং প্রায় ২২ শতাংশ ধোঁয়াবিহীন তামাক (SLT) যেমন জর্দা, গুল প্রভৃতি ব্যবহার করে থাকে। এতে ধোঁয়াযুক্ত তামাকের চেয়ে নিকোটিনের পরিমাণ তিন-চার গুণ বেশি। কাজেই জর্দার ক্ষতি সিগারেটের চেয়েও বেশি হতে বাধ্য। ল্যাবরেটরিতে প্রাণীদের ওপর পরীক্ষা করে দেখা গেছে যে, নিকোটিন প্রায় প্রতিটি অঙ্গে ক্যান্সার করতে পারে।

খয়ের : এর মধ্যে ১২ ধরনের রাসায়নিক পদার্থ আছে। খয়েরের অত্যধিক ব্যবহার লিভার ইনজুরি করতে পারে এবং এতে শরীরের রক্তচাপ কমে যেতে পারে।
পান : এর মধ্যে ইউজেনল (Eugenol) রয়েছে, যা রক্তনালীকে সঙ্কুচিত করতে পারে। পানের মধ্যে ভিটামিন সি, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, রেচক প্রভৃতি থাকতে পারে। তবে ‘বিষাক্ত গাছের ফল’ (সুপারি) খেলে পানির অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বা ভিটামিন সি কিইবা উপকার করবে?

উপরের আলোচনা থেকে আশা করি স্পষ্ট হয়েছে যে, সহজলভ্য ও সস্তা পান সুপারি আমাদের জন্য ব্যয়বহুল ক্যান্সার রোগ মহামারী আকারে ছড়িয়ে দিচ্ছে। অন্যান্য মাদকদ্রব্যের মতো পান সুপারিও নির্ভরশীলতা (Dependency) এবং প্রত্যাহার উপসর্গ (Withdrawl Syndrome) তৈরি করে। পৃথিবীতে নিকোটিন (বিড়ি, সিগারেট), মদ, ক্যাফেইনের (কফি) পর পান সুপারি হচ্ছে চতুর্থ বহুল ব্যবহৃত নেশা সৃষ্টিকারী বস্তু। অথচ জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকি হওয়ার পরও পান সুপারি বা পান মাসালা হচ্ছে অবহেলিত একটি আলোচ্য বিষয়। এই উপমহাদেশের ক্যান্সার বিশেষজ্ঞরা এরই মধ্যে এ ব্যাপারে সরব হচ্ছেন। অস্ট্রেলিয়াতে সুপারির ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়েছে। সংযুক্ত আরব আমিরাতে এর ব্যবহার নিষিদ্ধ এবং পান খাওয়া একটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ। থাইল্যান্ডে শিক্ষিতদের মধ্যে পান সুপারির ব্যবহার অনেক কমে যাচ্ছে। তাইওয়ান বছরে এক দিন ‘সুপারি প্রতিরোধ দিবস’ পালন করে থাকে এবং সরকারিভাবে কৃষকদের সুপারি উৎপাদন না করার জন্য নানা রকম প্রণোদনা দিচ্ছে। আমাদেরও সময় এসেছে এ ব্যাপারে জনসচেতনতা বৃদ্ধির জন্য কাজ করার।

মেডিটক ২৪ এর জনপ্রিয় ভিডিও কন্টেন্টগুলো দেখতে সাবস্ক্রাইব করুন Meditalk 24 ইউটিউব চ্যানেল। আপনার মতামত/লেখা পাঠান meditalk24@gmail.com অথবা info@meditalk24.com এ

সংবাদ টি শেয়ার করুন

অধ্যাপক প্রাণ গোপালের নামে পেজ খুলে ভেজাল ওষুধ বিক্রি, আটক ৬


মেডিটক ২৪
অধ্যাপক প্রাণ গোপালের নামে পেজ খুলে ভেজাল ওষুধ বিক্রি, আটক ৬

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) সাবেক ভিসি ও কুমিল্লা ৭ আসনের সংসদ সদস্য এবং নাক, কান ও গলা বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. প্রাণ গোপাল দত্তের নাম ও ছবি ব্যবহার করে ফেসবুকে ভুয়া পেইজ ও আইডি খুলে ভেজাল ওষুধ বিক্রি করত একটি চক্র। দেওয়া হতো পরামর্শ ও ওষুধ কেনার উৎসাহ। ডা. প্রাণ গোপালের চেম্বার সহকারী বদরুল ইসলাম গত ৭ ফেব্রুয়ারি কলাবাগান থানায় মামলা করলে সেটির ছায়া তদন্ত শুরু করে ডিবি। অবশেষে সেই চক্রের ৬ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে ডিবি সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম (উত্তর) বিভাগ।

গত ২৯ ফেব্রুয়ারি যশোর এবং সোমবার (৪ মার্চ) ঢাকার মিরপুরে অভিযান চালিয়ে তাদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়।

গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন—জহুরুল ইসলাম (৪১), সাবিদ চৌধুরী (৩৩), মোহাম্মদ আলী (৪১), রাফিদ ইসলাম নুহিন (১৯) ও জাকির নাসের (২২)। এসময় তাদের কাছ থেকে বিভিন্ন মডেলের মোবাইল ফোন ৮টি, সিম কার্ড ১৩টি, ল্যাপটপ ৩টি, আইডি কার্ড ২টি, ডিয়া ফিক্স নামে ১৪০ বোতল ওষুধ, বুস্টার বক্স ৪১০টি বোতল, লেবেল ছাড়া সবুজ রংয়ের ক্যাপসুল ৩৭০ বোতল, ডিয়া ফিক্স, প্রিমিয়াম হার্বাল ফর্মুলা লেবেল ৩০টি, গিংকো হিলোবা ১০০ গ্রাম যৌন উত্তেজক পাউডার, বিভিন্ন ওষুধ ও সাপলিমেন্ট তৈরির ফরমুলা লেখা একটি ডায়েরিও প্রায় ৩৮ লাখ টাকা উদ্ধার করা হয়।

মঙ্গলবার (৫ মার্চ) দুপুরে ডিবির নিজ কার্যালয়ে এসব তথ্য জানান ডিবির প্রধান ও অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ।

ডিবিপ্রধান বলেন, চক্রটি স্বনামধন্য অধ্যাপক ডা. প্রাণ গোপালের নামে ফেসবুক আইডি ও পেজ খুলে দীর্ঘদিন থেকে ভেজাল ওষুধ বিক্রি করে আসছিল। তারা এভাবে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। তারা ফেসবুকে সেই ভেজাল ওষুধের ছবি দিয়ে তাতে প্রাণ গোপালের ছবিও তারা ব্যবহার করেছিল। আসলে বিষয়টি সম্পর্কে প্রাণ গোপাল কিছুই জানতেন না। এ ঘটনায় মামলা হওয়ার পর আমরা ছয়জনকে গ্রেপ্তার করি। তাদের ছয়জনেরই শিক্ষাগত যোগ্যতা খুবই ভাল। কেউ এমবিএ, কেউ এমএসসি, কেউ অনার্সে পড়ছে। তাদের কাছ থেকে আমরা এক মাসের বিক্রি বাবদ ৩৮ লাখ টাকা উদ্ধার করেছি। এ থেকে বলা যায় তারা এসব ভেজাল ওষুধ বিক্রি করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। এখানেই শেষ নয়, তারা ভেজাল ওষুধ বিক্রির পাশাপাশি যৌন উত্তেজক বিভিন্ন ওষুধ নিজেরাই তৈরি করতেন। পরে এসব ওষুধ বিক্রির জন্য তারা ফেসবুকের পেজকে বুস্টিং করতেন। তারা এসব পেজ থেকে প্রাণ গোপালের নামে গ্রাহকের সঙ্গে মেসেজও আদান-প্রদান করতেন। আমরা তাদেরকে গ্রেপ্তারের পর রিমান্ডে এনেছি। তারা সব স্বীকার করেছে।

হারুন অর রশীদ বলেন, ফেসবুকে বিজ্ঞাপন দেখলেই বিশ্বাস করা যাবে না। আমরা এ ধরনের ভেজাল ওষুধ বিক্রিকারীদের এর আগেও গ্রেফতার করেছি। তাই যে সকল ওষুধগুলো কমন সেগুলো মানুষ খুব সহজেই ক্রয় করে। যেটা আসলে করা যাবে না। ওষুধ কেনার সময় কিন্তু সেটির গায়ে বিএসটিআই এর একটি অনুমোদন লোগো থাকে, সেটিও খেয়াল রাখতে হবে। এ ধরনের চটকদার বিজ্ঞাপন দিয়ে কোনো চক্র যদি ওষুধ বিক্রি করে তবে তাদের ব্যাপারে আমাদের জানাবেন। এ নিয়ে আমাদের ডিবি পুলিশ কাজ করবে।

ডিবি জানায়, কলাবাগান থানার মামলার সূত্র ধরে তাদেরকে গ্রেপ্তার করেছে ডিবি সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম (উত্তর) বিভাগ। তারা ‘নিখাদ’ নামের একটি ব্র্যান্ডের নামে এসব প্রতারণা করতেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিতে তাদের উৎপাদিত সকল পণ্য কুরিয়ারের মাধ্যমে বিক্রি করে।

মেডিটক ২৪ এর জনপ্রিয় ভিডিও কন্টেন্টগুলো দেখতে সাবস্ক্রাইব করুন Meditalk 24 ইউটিউব চ্যানেল। আপনার মতামত/লেখা পাঠান meditalk24@gmail.com অথবা info@meditalk24.com এ

সংবাদ টি শেয়ার করুন

চিকিৎসকদের উচিত মূলধারার সংগঠনে যুক্ত হওয়া


অধ্যাপক খাজা নাজিমুদ্দিন
চিকিৎসকদের উচিত মূলধারার সংগঠনে যুক্ত হওয়া

আমেরিকার প্রতিটি অঙ্গরাষ্ট্রে এ রকম অ্যাসোসিয়েশন আছে। প্রতিটি শহরেও এ ধরনের সংগঠন আছে। তাদের একটা চমৎকার ‘চেইন অব কম্যান্ড’ আছে। এতে চিকিৎসক নেতারা অঙ্গরাজ্যের সিনেটে চিকিৎসকদের স্বার্থ রক্ষার জন্য লবিং করেন, পলিটিক্যাল অ্যাকশন কমিটি করেন।

সারাবিশ্বের সব দেশের মতো এখানেও চিকিৎসকদের উপর নানা ধরনের চক্রান্ত কাজ করছে। যেমন, নতুন মেডিকেল কলেজ বা ট্রেনিং প্রোগ্রাম তৈরি হচ্ছে না। নার্স প্র্যাকটিশনার্সদের বা ফিজিশিয়ান অ্যাসিস্ট্যান্টদের স্বতন্ত্র কাজ করার অনুমতি দেওয়া হচ্ছে। এমনকি তাদের নামের আগে ডাক্তার টাইটেল লাগাবার অনুমতি দেওয়া হচ্ছে। ডাক্তারদের ক্ষমতা এবং নিরাপত্তা কমছে।

এএমএ কংগ্রেস এবং সিনেটে চিকিৎসকদের স্বার্থ রক্ষায় জন্য কাজ করেন। এদেশে কতগুলো মেডিকেল কলেজ হবে, প্রতি বছর কতজন নতুন চিকিৎসক বের হবেন, চিকিৎসকদের নিরাপত্তার জন্য কি আইন পাস করতে হবে, চিকিৎসকদের আইনি হয়রানি থেকে কিভাবে বাঁচানো যাবে? এসব নিয়ে সংগঠনের নেতারা সিনেটর বা কংগ্রেসম্যানদের সাথে কাজ করেন। এসব সংগঠনে রাজনৈতিক মতভেদ নেই। চিকিৎসকদের স্বার্থ রক্ষার জন্য সবাই এক। 

অথচ এদেশে অধিবাসী চিকিৎসকদের প্রতিটি সংগঠনে বিভক্তি দৃশ্যমান। তারা এদেশের মূলধারা থেকে আলাদা। যদিও এর ব্যতিক্রম আছে এবং ব্যতিক্রমগুলো ব্যক্তিগত পর্যায়ে। তারা প্রায় সবাই মূলধারার চিকিৎসকদের সংগঠনের সাথে সংশ্লিষ্ট।

গত দুই বছরে আমি এদেশের মূলধারার চিকিৎসকদের সংগঠনের সাথে যুক্ত হয়েছি। এখানে কাজ করা আনন্দের এবং গর্বের। কাজ করার পরিধি অসীম। কেউ পেছন থেকে টেনে ধরে না। প্যানেল করে ভোট দিয়ে এখানে নির্বাচন হয় না। নকল ভোটার বানানো হয় না।

এসব সংগঠন মেডিকেল কলেজ এবং বড় বড় হাসপাতাল এবং প্র্যাকটিসের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করে। মেডিকেল কলেজের ছাত্রদের মেন্টরশিপ, গবেষণায় সাহায্য করে। সদস্যদের স্বল্পহারে ঋণের ব্যবস্থা করে, চিকিৎসকদের আইনি সহযোগিতা করে, বিষণ্ণ এবং মানসিক বিষাদগ্রস্ত চিকিৎসকদের সহযোগিতা করে। এসব সংগঠনের চিকিৎসকরা পদ-পদবির জন্য মামলাবাজী করেন না।

আমি এবার আমাদের অঙ্গরাজ্যের এরকম একটি সংগঠনের বোর্ড মেম্বার নির্বাচিত হয়েছি। আমাদের উদ্বোধনী বা পরিচিতি অনুষ্ঠানে এএমএয়ের সভাপতি ডাবল স্টার মেজর জেনারেল অধ্যাপক ডা. জেরাল্ড হারম্যান ও ওয়ার্ল্ড মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি অধ্যাপক ডা. সিসিল উইলসন সাথে পরিচিত হয়ে এবং তাদের বক্তৃতা শুনে অত্যন্ত আবেগতাড়িত হলাম। আমাদের উচিত মূলধারার চিকিৎসকদের সংগঠনে যুক্ত হওয়া। এখানে অতি সহজে অনেক কাজ করতে পারবেন। নেতৃত্বের বিভাজন আর যুক্তকরণ নিয়ে সময় নষ্ট করতে হবে না।

মেডিটক ২৪ এর জনপ্রিয় ভিডিও কন্টেন্টগুলো দেখতে সাবস্ক্রাইব করুন Meditalk 24 ইউটিউব চ্যানেল। আপনার মতামত/লেখা পাঠান meditalk24@gmail.com অথবা info@meditalk24.com এ

সংবাদ টি শেয়ার করুন

হঠাৎ বমি হলে, কী করবেন


হঠাৎ বমি হলে, কী করবেন

নানা রোগের উপসর্গ হিসেবে বমি হয়ে থাকে। বদহজমের মতো অতিসাধারণ কারণে যেমন বমি হয়, তেমনি গুরুতর কোনো কারণেও শুরু হতে পারে হঠাৎ বমি। এক–দুবার বমি হওয়ার পর যদি প্রাথমিক চিকিৎসায় সেরে যায় এবং আর কোনো উপসর্গ না থাকে, তাহলে ভয়ের কিছু নেই।

কিন্তু বমি এমনই অস্বস্তিকর আর পীড়াদায়ক যে তৎক্ষণাৎ কী করবেন, তা জানা না থাকলে মুশকিল।

কোন বমির কী কারণ

 

খাবারে বিষক্রিয়া: নানা কারণে হতে পারে খাবারে বিষক্রিয়া। এটা কখনো হয় বিভিন্ন ধরনের জীবাণুর কারণে, আবার অনেক সময় খাবারে বিষাক্ত উপাদান থাকার কারণে। বাইরের কেনা খাবার কিংবা অস্বাস্থ্যকর খাবার (পচা–বাসি, মাছি বসেছে এমন খাবার) খেয়ে থাকলে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে খাদ্যে বিষক্রিয়ার উপসর্গ হিসেবে বমি হতে পারে। সঙ্গে থাকতে পারে পেটব্যথা, পাতলা পায়খানা কিংবা মৃদু জ্বর।

লিভারের প্রদাহ: বমির অন্যতম কারণ লিভারের প্রদাহ বা হেপাটাইটিস। বমির সঙ্গে পেটের ডান দিকে ওপরের অংশে ব্যথা, খাবারে অরুচি, চোখ বা প্রস্রাব হলুদ হয়ে যাওয়ার মতো লক্ষণও দেখা দিতে পারে। থাকতে পারে জ্বর।

পিত্তথলির প্রদাহ: পিত্তথলির প্রদাহ হলে পেটের ওপরের অংশে (বুকের নিচ বরাবর) কিংবা পেটের ডান দিকে ওপরের অংশে ব্যথা হতে পারে। ব্যথা ছড়িয়ে যেতে পারে কাঁধের দিকে। বমি তো হতেই পারে। খাওয়ার পর বিশেষ করে ভারী কিছু খাওয়ার পর ব্যথা ও বমি বাড়ে।

অগ্ন্যাশয়ের প্রদাহ: অগ্ন্যাশয়ে প্রদাহ হলে বমি ছাড়াও পেটের ওপরের অংশে প্রচণ্ড ব্যথা হয়, যা পেছনে পিঠে ছড়িয়ে যেতে পারে। থাকতে পারে প্রচণ্ড জ্বরও। খুব দ্রুত অসুস্থ হয়ে পড়ে রোগী।

অ্যাপেন্ডিক্সের প্রদাহ: অ্যাপেন্ডিসাইটিসে আক্রান্ত ব্যক্তির নাভির গোড়ায় কিংবা তলপেটের ডান দিকে ব্যথা, ক্ষুধামান্দ্যর সঙ্গে বমিও থাকতে পারে।

গ্যাসের সমস্যা: পেপটিক আলসারজনিত সমস্যায়ও বমি হতে পারে। সঙ্গে থাকতে পারে বুকে জ্বালাপোড়া, খাওয়ার পর গলা জ্বলা, ঢেকুর ওঠা এবং পেট ভার অনুভূত হওয়ার মতো সমস্যাও।

মূত্র ও মূত্রথলির সংক্রমণ: কেবল পরিপাকতন্ত্রের সমস্যায় বমি হয়, তা নয়, বরং প্রস্রাবে বা মূত্রে সংক্রমণ হলে তলপেটে ব্যথা, ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়া, কাঁপুনিসহ জ্বর যেমন হতে পারে, তেমনি হতে পারে বমিও। মূত্রনালি ও মূত্রতন্ত্রের ওপরের অংশে প্রদাহ হলেও বমিসহ কাঁপুনি দিয়ে জ্বর আসতে পারে। কোমরের দুই পাশে ব্যথা হতে পারে।

দীর্ঘমেয়াদি কিডনি রোগ: দীর্ঘমেয়াদি কিডনি রোগে বা কিডনি ফেইলিউরে শরীরে ক্রমাগত বর্জ্য পদার্থ জমা হতে থাকে বলে জটিলতা বাড়ে। এ ধরনের রোগীর ক্ষুধামান্দ্য ও বমির প্রবণতা দেখা যায়।

মস্তিষ্কের রোগে বমি: মস্তিষ্কের গুরুতর সমস্যায় বমি হতে পারে একটি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণ। মস্তিষ্কের প্রদাহ (এনকেফেলাইটিস), মস্তিষ্কের পর্দা বা আবরণীর প্রদাহ (মেনিনজাইটিস), এমনকি মস্তিষ্কে টিউমার হলেও বমি হতে পারে। মাথাব্যথার (বিশেষত সকালবেলার তীব্র মাথাব্যথা) সঙ্গে বমি হলে অবশ্যই এমনটা সন্দেহ করতে হবে। কখনো রোগীর জ্ঞানের মাত্রার তারতম্য হতে পারে, হতে পারে খিঁচুনিও। প্রদাহ হয়ে থাকলে জ্বর হতে পারে।

গর্ভাবস্থা: বিবাহিত নারীর ক্ষেত্রে ভিন্ন একটি সম্ভাবনার কথা মাথায় রাখতে হবে। শেষবার মাসিক হওয়ার পর কত দিন পেরিয়ে গেছে, তা হিসাব করতে হবে। অনেক সময়ই নারীরা নিজের খেয়াল রাখার সময় পান না। গর্ভাবস্থার প্রথম তিন মাস বমি ভাব ও বমি হওয়াটা স্বাভাবিক।

মানসিক: অনেক সময় কোনো কারণ ছাড়াই কেউ কেউ বমির সমস্যায় ভুগে থাকেন। বিশেষ করে কম বয়সী মেয়েদের বা শিশুদের ক্ষেত্রে এমনটা বেশি দেখা যায়। একে বলে সাইকোজেনিক বমি। এসব ক্ষেত্রে চিকিৎসক সম্ভাব্য কোনো কারণ খুঁজে না পেলে এবং মানসিক অস্থিরতা বা অন্য কোনো মানসিক যোগসূত্র পেলে মানসিক সমস্যাকে বিবেচনায় নিয়ে থাকেন।

কী করবেন

বমি হলে শরীর থেকে প্রচুর লবণ ও পানি বেরিয়ে যায়। তাই বমি হলেই স্যালাইন পানি পান করতে হবে। তা না হলে রোগী খুব দুর্বল হয়ে পড়বেন। পানিশূন্যতা দেখা দেবে। অনেকের ধারণা ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ বা কিডনি রোগীদের স্যালাইন খাওয়া যাবে না, ধারণাটি ঠিক নয়। পানি ও লবণের অভাব যে করেই হোক পূরণ করতে হবে।

একবারে স্যালাইন পানি পান না করতে পারলে একটু পরপর অল্প অল্প করে নিতে হবে। স্যালাইন যাতে বমির মাধ্যমে বের না হয়ে যায়, সে জন্য দরকার হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে বমির ওষুধ আগে খেয়ে নিন।

সাধারণ সমস্যায় এক-দুবার বমি হওয়ার পর স্যালাইন খেলেই খানিকক্ষণ পর রোগী সুস্থ বোধ করেন। সাধারণ বমির ওষুধে সেরেও যায়। তবে বারবার বমি হতে থাকলে হাসপাতালে নেওয়া দরকার। খাবার স্যালাইনও সে ক্ষেত্রে বের হয়ে আসতে থাকে। তাই প্রয়োজনে রোগীকে শিরাপথে স্যালাইন দিতে হবে।

হাসপাতালের জরুরি বিভাগে বমি কমানোর ইনজেকশন দিয়ে কিছুটা উপশম করার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু ইতিহাস জেনে ও প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর বমির কারণ অনুসন্ধান করে তারপর সেটার চিকিৎসা শুরু হবে। কোনো কোনো ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায়ও বমি হতে পারে। তাই সাম্প্রতিক সময়ে কোনো ওষুধ সেবন করে থাকলে সেটি চিকিৎসককে জানাতে ভুলবেন না।

মেডিটক ২৪ এর জনপ্রিয় ভিডিও কন্টেন্টগুলো দেখতে সাবস্ক্রাইব করুন Meditalk 24 ইউটিউব চ্যানেল। আপনার মতামত/লেখা পাঠান meditalk24@gmail.com অথবা info@meditalk24.com এ

সংবাদ টি শেয়ার করুন

সংক্রমণ বাড়ায় ৩০ দিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ চেয়ে হাইকোর্টে আবেদন


সংক্রমণ বাড়ায় ৩০ দিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ চেয়ে হাইকোর্টে আবেদন

দেশে করোনাভাইরাসের ঊর্ধ্বমুখী সংক্রমণের কারণে শিগগির সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ৩০ দিন বন্ধের নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিট আবেদন করেছেন আইনজীবী ইউনুছ আলী আকন্দ।

আজ বুধবার (১৯ জানুয়ারি) জনস্বার্থে এই আবেদন করেন তিনি। এতে স্বাস্থ্য সচিব, শিক্ষা সচিবসহ সংশ্লিষ্টদের বিবাদী করা হয়েছে।

ইউনুছ আলী গণমাধ্যমকে বলেন, ‘বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি এস এম মনিরুজ্জামানের হাইকোর্ট বেঞ্চে এই আবেদনের ওপর শুনানি হতে পারে।’

এদিকে দেশে করোনাভাইরাসের ঊর্ধ্বমুখী সংক্রমণের কারণে বুধবার (১৯ জানুয়ারি) থেকে ভার্চুয়ালি চলছে সুপ্রিম কোর্ট। সুপ্রিম কোর্টের আপিল ও হাইকোর্ট উভয় বিভাগের বিচারিক কার্যক্রম ভার্চুয়ালি শুরু হয়েছে।

মেডিটক ২৪ এর জনপ্রিয় ভিডিও কন্টেন্টগুলো দেখতে সাবস্ক্রাইব করুন Meditalk 24 ইউটিউব চ্যানেল। আপনার মতামত/লেখা পাঠান meditalk24@gmail.com অথবা info@meditalk24.com এ

সংবাদ টি শেয়ার করুন

স্বাস্থ্য ও শিক্ষা সম্পর্কিত যে কোন সংবাদ, প্রবন্ধ বা লেখা পাঠাতে- news@meditalk24.com
বিজ্ঞাপন ও প্রোমোশন- sales@meditalk24.com
মোবাইল: 01713720173

Shuddho Megh কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।